‘ট্রান্স মডেল হিসেবে অংশ নেওয়া বড় প্রাপ্তি’
বাংলাদেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার নারী হিসেবে নিউইয়র্ক সিটি ফ্যাশন উইকে অংশ নিলেন তাসনুভা আনান। এ আয়োজনে মডেল হিসেবে র্যাম্পে হেঁটেছেন তিনি। নিউইয়র্কের সিলাম গ্যালারিতে আজ রোববার সকালে (মার্কিন সময় শনিবার রাত) অনুষ্ঠিত শোর পর মেসেঞ্জার কলে তাসনুভা কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে।
কিছুক্ষণ আগেই তো নিউইয়র্ক সিটি ফ্যাশন উইকের র্যাম্পে হাঁটলেন। অনুভূতি কেমন?
একেবারেই অন্য রকম অনুভূতি। এ রকম একটা আন্তর্জাতিক আয়োজনে নিজের দেশকে তুলে ধরা, ট্রান্স মডেল হিসেবে অংশ নেওয়া আমার জন্য বড় প্রাপ্তি। সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হলো, আমার মাধ্যমে এ আয়োজনের সবাই বাংলাদেশের নাম জানলেন।
কোন ডিজাইনারের পোশাক পরে হাঁটলেন? কী ধরনের পোশাক ছিল?
স্পেনের ডিজাইনার অস্কার গনজালেসের পোশাক ছিল আমাদের কিউতে। পোশাকের থিম ছিল ভালোবাসা দিবস। লাল, সাদা আর কালো রং দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। আমি দুটি পোশাক পরেছি। একটা শীতকালের হুডি, আরেকটা ছিল গাউন।
ফ্যাশন উইকে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে যোগাযোগ হলো কীভাবে?
ফ্যাশনের এই আয়োজনের নাম ‘প্লিৎজ নিউইয়র্ক সিটি ফ্যাশন উইক’। আয়োজক হলো প্লিৎজ, সাউন্ডপেস ইন্টারন্যাশনাল ও ফোর এএম টিভি ইউএসএ। আমি নিউইয়র্ক এসেছি শুনে আয়োজকদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, ফ্যাশন শোতে অংশ নিতে চাই কি না। আমি রাজি শুনে ডিজাইনার অস্কারের দলে আমাকে দেওয়া হলো। এরপর শুরু হলো মহড়া।
মহড়া কত দিন হলো?
এক দিন অনলাইনে আর এক দিন সশরীর মহড়া করেছি।
আপনার কিউতে ট্রান্সজেন্ডার আর কোনো মডেল ছিলেন?
না। আমি একাই। বাকি সবাই মূলধারার মডেল।
কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
অনেক জায়গায় যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়, সেই লিঙ্গবৈষম্য এখানে দেখিনি। ডিজাইনার অস্কার ও তাঁর দলের সবাই আমার জীবনের গল্প শুনেছেন আগ্রহ নিয়ে। আমার এগিয়ে চলার কথা শুনে উৎসাহ দিয়েছেন। একটা বিষয় দেখলাম, এখানে যে যত জানে, সে তত বিনয়ী। এ ব্যাপারটা ভালো লেগেছে। সবাই আমাকে খুব সহযোগিতা করেছেন।
র্যাম্প মডেল হিসেবে এটাই কি প্রথম অভিজ্ঞতা?না। দেশে কয়েকটা শোতে হেঁটেছি, তবে সেগুলো উল্লেখ করার মতো নয়। নিউইয়র্কে এসে যে অভিজ্ঞতা হলো, দেশে তেমন হলে আমি আরও ভালো থাকতাম। দেশের ডিজাইনাররা তো আমাকে নিতেই চান না। আমি এটাকে তাঁদের ব্যর্থতা বলতে চাই। তাঁরা আমাকে সেভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। আবার আমি অভিনয় করি। অভিনয় ভালোবাসি। মঞ্চনাটকে নিয়মিত কাজ করি। তবে টিভি নাটক বা চলচ্চিত্র নির্মাতারা ভালো কোনো চরিত্র নিয়ে আমার কাছে আসেননি। তারপরও আমি আশাবাদী। দেশের বড় ফ্যাশন শোতে, চলচ্চিত্রে হয়তো কাজ করার সুযোগ পাব। ২০১৬ আর ২০২২–এর বাংলাদেশে তো পার্থক্য আছে।
নিউইয়র্কে কবে গেছেন? দেশে ফিরছেন কবে?
২ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে এসেছি। আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থায় ট্রান্সজেন্ডারদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজ ছিল। এখানে আমি চিকিৎসকের কাছেও যাব। তারপর দেশে ফিরব।
সামনে পরিকল্পনা কী?
কিছুদিন আগেই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে মাস্টার্স করলাম। এখন কিছুদিন বিশ্রাম নিতে চাই। আর আমি শৈল্পিকতা নিয়ে বাঁচতে চাই। শিখতে চাই। অভিনয় বা মডেলিংয়ে যাঁরা সুযোগ দেবেন, তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে চাই।
সূত্র : প্রথমআলো